আমার 'মা', একজন জীবনযোদ্ধা

আমার মায়ের গল্প

আমার আম্মুর বিষয়ে এতো ছোট পরিষরে বা সংক্ষেপে কিছু লিখে শেষ করা সম্ভব নয়। আমরা ৩ ভাই আর এক বোন, আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন আব্বু মালয়েশিয়াতে ছিলেন। মিনহাজ তখনও জন্মায় নি। আব্বুর আয় রোজগার তেমন ভালো ছিলোনা বিদেশে তাই উনি ১৯৯৮ ইং সালে দেশে চলে আসেন। দেশে আসার পর থেকে অনেক কিছু করার চেষ্টা করেছেন কিন্তু সফল হতে পারেন নি। অনেক সহজ সরল এবং একজন ভালো মানুষ ছিলেন আমার বাবা। জীবনযোদ্ধে হেরে গিয়ে ২০০৮ ইং সালে আব্বু মারা যান হঠাৎ করেই। দিনটা এখনো আমি ভুলতে পারিনা। আব্বু মারা যাওয়ার পর থেকেই আমার আম্মুর জীবনের কঠিন থেকে কঠিনতম যোদ্ধ শুরু হয়। অনেক কষ্ঠ করে আম্মু আমাদের মানুষ করেন । আব্বু মারা যাওয়ার ১৪ মাস পূর্বে আমাদের ছোট ভাই মিনহাজের জন্ম হয়। তাই মিনহাজের জন্য সেই সময়টা আরো বেশি কষ্ঠের ছিল। সেই সময় আমি মাত্র ইন্টার এর ছাত্র আর বড় ভাইয়া স্নাতকের। ভাইয়া তায়াক্কুল ইন্টারপ্রাইজে সেইলসের চাকরী করতো পাশাপাশি কিছু টিউশন আর আমি টুকটাক নেটওয়ার্ক মার্কেটিং কাজ করে আয় করতাম। ৫ জনের পরিবারে অভাব অনটন লেগেই থাকতো। আমার আম্মু অনেক কষ্ঠে সংসার এর ব্যায়ভার চালাতেন। এক সময় আম্মু নিজেই কাজ করা শুরু করেন। পিঠা আর নাস্তা বানাতে পারতেন আম্মু, অল্প দিনেই কয়েকটি দোকানে পিঠা আর নাস্তা দেওয়া শুরু করি। অনেক তিক্ত আর কর্কশ অভিজ্ঞতাই পরিপুর্ন সেই দিন গুলো। সারারাত জেগে থেকে আম্মু পিঠা বানাতো, সাথে বড় ভাইয়া অনেক সাহায্য করতো আম্মুকে, আবার সকা্লে আমি গিয়ে ডেলিভারি দিতাম। বর্ষার মৌসুমে আমাদের এলাকায় অনেক পানি উঠতো, সেই সময় ডেলিভারি দেওয়াটা অনেক কষ্ঠের ছিলো। অনেক বেশি কষ্ঠ লাগতো যখন বৃষ্টি বা অন্য কারনে বিক্রি না হওয়ার কারনে দোকানদার সন্ধ্যায় টাকা আনতে গেলে অবশিষ্ট অবিক্রিত পিঠা ফেরত দিতো।

আরোও বিস্তারিত দেখুন
আমার আম্মু
আমার আম্মু

মায়ের স্বপ্ন

স্বপ্নময়ী আমার 'মা'

যখন থেকে জ্ঞান হয়েছে, বুঝতে শিখেছি তখন থেকেই আম্মুর রাগ আর জিদ দেখে বড় হয়েছি। কোন ধরনের চাওয়া, পাওয়া দেখিনি। নিজের জন্য কখনো কোন ভালো কাপড় কিনতে দেখিনি এমনকি ভালো খাবার পর্যন্ত না। আমার ৪ ভাই-বোন আম্মুর সব কিছু। আমাদের নিয়ে আম্মুর স্বপ্ন অনেক। সব সময় বলে তোরাই আমার সম্পদ। চাওয়ার মধ্যে শুধু একটা জিনিস আমার কাছে জোর দিয়ে চেয়েছেন আর সেইটা হলো আমি যাতে আম্মুর হজ্বে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করি, সব রকম ব্যবস্থা করি এবং আমি সাথে যায়। আমি সব সময় আল্লাহকে বলি আল্লাহ যাতে আমার আম্মুর এই স্বপ্ন খুব তাড়াতাড়ি পূরন করেন, আমিন। আমার জীবনের প্রথম পোর্টফোলিও আমার আম্মুর গল্প দিয়ে সাজালাম। আপনারা যারা আমার আর্টিকেলটি পড়ছেন তারাও অনুগ্রহ করে আমার মায়ের এই স্বপ্ন পূরনের জন্য দোয়া করবেন।

স্বপ্ন নিয়ে আরোও কিছু কথা দেখুন

আম্মুর সাথে কিছু বিশষ স্মৃতি

৬ষ্ট শ্রেনীর সময়কার ঘটনা

ছোট বেলা থেকেই আমার ক্লাস রুল ছিল ০১। ৬ষ্ট শ্রেণীর দ্বিতীয় সাময়িক পরিক্ষায় রুল ১ থেকে ৬ নাম্বারে চলে যায়। এইজন্য আম্মু আমাকে মাদ্রাসা হোষ্টেলে পাঠিয়ে দেয়। অনেক কান্নাকাটি করেও কোন লাভ হয়নি। পরে আম্মুকে কথা দিয়েছিলাম যে বার্ষিক পরিক্ষায় রুল ১-য়ে নিয়ে আসবো তারপর ২ মাস পর আমাকে হোষ্টেল থেকে বাসায় যায়গা দিছে। আমিও কথা রেখেছিলাম তখন।

জিদ করে ৫ মাস কথা না বলা

২০১৪ সালে আমি ব্যবসায় ক্ষতির কারনে রাগ করে বাসা থেকে বের হয়ে ঢাকা চলে আসি। দীর্ঘদিন ঢাকায় থাকার পরও চাকুরী করে তেমন ভালো আয় রোজগার করতে পারছিলাম না। সেই সময়টায় ঢাকায় অনেক বেশি সংগ্রামের জীবন পার করিছি , বাসায় তেমন খরচ পাঠাতে পারতাম না। একদিন আম্মুর সাথে রাগারাগি হয় আমার। সেইদিনের পর থেকে আম্মু আমার সাথে ৫ মাস কথা বলেন নি, এমনকি আমার জন্মদিনেও না। ২০১৬ ইং সালের ১৮ ফেব্রুয়ারী আম্বাসীতে জবের নিয়োগপত্র পাই। তখন আমার খুব কাছে ছোট ভাই মারুফের কাছে ৮০০ টাকা পাঠিয়ে বলি আম্মুর জন্য মিষ্টি নিয়ে যেতে। তখন আমার নানুও জীবত ছিলেন। তখন মারুফের মোবাইল থেকে দীর্ঘ ৫ মাস পর আমার সাথে কথা বলেন আম্মু।